মোঃ আব্দুস শহীদ (লেখক ও বিশ্লেষক)
সম্পাদক: দৈনিক নলডাঙ্গার সময়
আজীবন সদস্য ও সভাপতি
কম্বাইন্ড হিউম্যান রাইটস ওয়ার্ল্ড, নাটোর।
আজ ১২ই মে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। বিশ্বের সকল নার্স (সেবিকা)দের অকৃত্রিম ভালোবাসা, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আমার প্রবন্ধটি শুরু করছি। আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি এক মহিয়সী রমণী ও আধুনিক নার্সিং পেশার রূপকার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলকে। ১২ই মে ১৮২০ সালে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী এই দিনে ‘আন্তর্জাতিক নার্স দিবস’ উদযাপন করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপন করা হয়ে থাকে। তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় রুফায়দা আল আসলামিয়া (জন্ম আনুমানিক ৬২০ খ্রিস্টাব্দে) নামে জনৈকা সমাজ কর্মী বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম ও মুসলিম নার্স ছিলেন।
কিন্তু আধুনিক নার্স হিসেবে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল স্বীকৃতি লাভ করেন। ক্রিমিয়ার যুদ্ধ চলাকালীন তুরস্কে সৈন্যদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।একজন সুপরিচিত ওয়ার্ড রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি রাতের বেলায় হাসপাতালে মুমূর্ষ রোগীদের দেখতেে পরিদর্শনে যেতেন। তাই তাঁকে ‘লডি উইথ দ্যা ল্যাম্প ‘ নামেও সম্বোধন করা হয়ে থাকে। ফ্লোরেন্সের বড় বোন পার্থেনোপের নাম ইতালীও জন্মস্থানের নামে রাখা হয়।
১৮২১ সালে যখন অ্যাঙ্গেলরা ইংল্যান্ড এর আসেন, তখন তাদের সময় দ’টি ঘরের মধ্যে ভাগ করে নিতে হতো। উষ্ণ মাসগুলিতে ডার্বিশায়ারের লি হাস্ট এস্টেট তাদের ছুটি কাটানোর ঘর হিসাবে কাজ করতো। অন্যদিকে হাম্পশায়ারের এমবলি তাদের শীতকালীন ছুটির সময় হিসেবে কাজ করতো।
যাহোক নাইটেঙ্গেল তার বাবা মাকে বলেছিলেন যে তিনি জীবনে একজন নার্স হবেন। যদিও সেই সময় নার্সদের তেমন কোন সামাজিক মর্যদা ছিলনা। ১৮৬০ সালে লন্ডনে বিশ্বের প্রথম বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তৈরি হয় নার্সিং শেখানোর নাইটিঙ্গেল স্কুল অফ নার্সিং। সেখানে ছিল তাঁর অসামান্য অবদান। সর্বোপরি, তিনি তাঁর আন্তরিকতা এবং একাগ্রতা দিয়ে নার্সিং পেশাটাকে মহত্বর করে তুলতে যে ভূমিকা রেখেছেন তা অবিস্মরণীয়। ১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট এই মহিয়ষী রমণী ইহলোক ত্যাগ করেন। রেখে গেছেন দুনিয়ার ব্যাপী অসংখ্য ভক্ত ও অনুরাগী।
বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন (বিএনএ) ১৯৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশে দিবসটি পালন করে আসছে। অতীতে ঢাকায় স্বল্প পরিসরে দিবসটি পালিত হলেও বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।
উন্নততর বিশ্বে নার্সদের সামাজিক মর্যদা ব্যপক ভাবে বদলে গেছে। তাঁদের প্রশিক্ষণ ও উচ্চতর পড়াশোনার জন্য নতুন নতুন ইন্সটিটিউট স্থাপিত হলেও বাংলাদেশ বেশ পিছনে রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোর মান নিয়ে নানান প্রশ্ন রয়ে গেছে। আবার উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনকারী নার্সদের আলাদা কোন মর্যদা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভয় হয়নি। আর সে কারণে তাঁদের মধ্যে রয়েছে নানা অসন্তোষ।
আমরা আজকের এই দিনে তাঁদের যথাযথ মর্যদায় ভূষিত করার জন্য বর্তমান নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছি। নইলে ছাত্র-জনতার এই আগস্ট বিপ্লবের অঙ্গীকার ব্যর্থ হবে।
(মোঃ আব্দুস শহীদ)